বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গা পুজো এক অতি শুভ ও আনন্দের উৎসব। দুর্গা প্রতিমাকে সাজানো হয় রঙিন শাড়ি ও সাবেকি বাঙালি গয়না দিয়ে। শুধু মায়ের প্রতিমা কেনো, বাঙালি নারীরাও সেজে ওঠে সাবেকি সোনার গয়নায়। যেকোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে, বাঙালিরা সোনার গয়না পড়তে পছন্দ করে। আর উপলক্ষ্য যদি হয় দুর্গা পুজো, তাহলে আর সোনার গয়না বাদ যায় কি করে! সোনা শুভ ও সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। কিছু কিছু বিশেষ গয়না আছে যেগুলো এই পুজোর সাজের জন্য বাঙালি মেয়েরা অবশ্যই চায়।
কান পাশা : আধুনিক যুগের কানের কড়ার পুরোন ধরণ হল কান পাশা। কান পাশা সারা কান জুড়ে থাকে ও খুব নিখুঁত কাজে ভরা। সাবেকি রুপের পরিচয় বাহক এই সাজটি যেন একটা রাজকীয় ভাব এনে দেয় সাজটায়। বিয়ে বা দুর্গা পুজো, যেকোনো অনুষ্ঠানে এর একটা আলাদা কদর রয়েছে।
টিকলি : ভারতীয় সাজে ‘মাং টিকা’ বলে অভিহিত গয়নাটি বাঙালিদের কাছে টিকলি। পুরো সোনার তৈরি এই আভূষণটিতে কোনো কুন্দন বা পাথর বসান হয় না। আসলে এটা বাঙালিদের মধ্যে দেখা যায়, সোনার কিছু পরলে তার সাথে অন্য কিছু মেশাতে বা পাথর জাতীয় কিছু বসানো ভালবাসে না। সোনার জিনিস মানে শুধুই সোনার হবে। এদের কাছে এটাই যেন এর প্রকৃত রুপদান করে, আর সেটা ঠিকও বটে।
নথ : শুধু বাঙালিদের না, ভারতবর্ষের সব জায়গাতেই নথের চল আছে। যদিও এক এক জায়গার ধরণটা আলাদা। নাকের ফুঁটোয় পরা নথটি লম্বা চেন দিয়ে টানা থাকে কানের পেছনে। পুরোটাই হয় সোনার তৈরি। নথেরই ছোট রুপ হল নাকছাবি।
ঝুমকা : অনেকের ভাষায় যার নাম ঝুমকো, বাঙালির কাছে সেটাই হল ঝুমকা। বাঙালিদের পছন্দের আবার বিশেষ কিছু ডিজাইন আছে এই গয়নাটির। খুব বেশি সাজতে না চাইলে, এক জোড়া ঝুমকোই যথেষ্ট। এক জোড়া সুন্দর ঝুমকো যেকোনো বাঙালি মেয়েকে করে তোলে আরও সুন্দরী।
চিক : চোকারের বাঙালি রুপ হল চিক। তবে এটা অনেক চওড়া হয়ে থাকে। শাড়ির সাথে বাঙালি তনয়ার রুপ বৃদ্ধি করে একটা চিক। সোনার চিক দারুণ লাগে তাঁতের শাড়ির সঙ্গে।
সীতাহার : বাঙালি মহিলারা লম্বা মাপের গলায় যে হার পরে, তাকেই সীতা হার বলা হয়ে থাকে। আগেকার দিনে নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো বিবাহিত স্ত্রীর সীতা হার পরে থাকার কথা। কিন্তু যুগ বদলেছে, তাই এখন আর নিয়মিত পরতে দেখা যায় না কাউকেই। তাই দুর্গা পুজোর সময় বাঙালি মেয়েদের শাড়ির সাজে সীতা হার থাকবেই। গয়নাটির নাম এসেছে পুরাণের গল্প থেকে। যখন রাবণ সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন সারা পথে নিজের গয়না উনি ছড়াতে ছড়াতে যান। এতে রামের পক্ষে সীতাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। সেখান থেকেই নামটা নেয় এই লম্বা হারটি।
বালা : হালকা কিছু চুড়ির সাথে হাতে মোটা বালা পরার চল কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে অনেকদিনের। পুরো সোনায় বানান বালা, বাঙালি মেয়েদের হাতে সব সময়ই জায়গা পায়,আর পুজোর সাজে এটা তো থাকবেই।
মানতাসা : মানতাসা এক মনমোহক গয়নার নিদর্শন বলতে পারেন বাঙালি মেয়েদের। এটা বিয়ে, অনুষ্ঠান বা পুজোয় তারা অবশ্যই পরে থাকে। এটা খুব চওড়া মাপের হাতে চুড়ি, যার ওপর নিখুঁত সোনার কাজ হয়ে থাকে। এটা এতটাই চওড়া যে এটা পরলে আর কিছু পরার দরকারই হয় না। এমনিতে এটা এক হাতে পরা হয়, অন্য হাতটা খালি রাখা হয় হালকা সরু চুড়ির জন্য।
রত্নচূড় : রত্নচূড় হাতের এক আভূষণ যা কিছু সোনার সুতোর মতো এক এক আঙুলে আংটির মতো পরা হয়ে থাকে। এটা পুরো সোনার হয় এবং হাতের ওপরটা পুরোটা জুড়ে থাকে। সাধারণত প্রচলিত ডিজাইনে হাতের ওপরে মাঝখানটা ময়ূর বা পদ্মর ধরণে বানানো হয়ে থাকে। অপূর্ব এক গয়না বলতে পারেন।
আংটি : দুর্গা পুজো বা কোনো বড় অনুষ্ঠানে বাঙালির সাজ আংটি ছাড়া পূর্ণ হয় না। সাবেকি সাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এটা। আবার বাঙালিদের জন্য এর কিছু বিশেষ ডিজাইন আছে, যেটা হাতের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে তোলে