মাহে রমজানসহ সারা বছরে আল্লাহর কাছে বান্দার আনুগত্য প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হলো নামাজ। একজন ইমানদার নারী-পুরুষের প্রধান করণীয় ইবাদত নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। নামাজের সময় শরীরের শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মাথা মাটিতে লুটিয়ে সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। কারণ, নামাজ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের প্রধান নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা যেসব ইবাদত ফরজ করে দিয়েছেন তন্মধ্যে সালাত অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ৮২ বার সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত দাও এবং যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রমজান মাসে সব ফরজ ইবাদতের মধ্যে নামাজই সবচেয়ে অগ্রগণ্য। নামাজ ইমানকে মজবুত করে। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি_ কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। প্রথম তিনটি গরিব-ধনী প্রাপ্তবয়স্ক সব মুসলমানের ওপর ফরজ। আর শেষের দুইটি সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ফরজ।
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ। ইমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজ বারো মাসই আদায় করতে হয়। আর রোজা শুধু মাহে রমজানে ফরজ। একজন মুমিন মুসলমান বছরজুড়ে নামাজ আদায় করবেন_ এটাই স্বাভাবিক। এর পর যখন পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটবে, তখন নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানের রোজাগুলোও পালন করবেন। একজন রোজাদার শুধু রোজা রাখবেন, নামাজ পড়বেন না_ এমনটা কখনও কল্পনা করা যায় না। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর আলোচনা রয়েছে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি।’ চাবি ছাড়া যেমন তালাবদ্ধ ঘরে প্রবেশ করা যায় না; নামাজ কায়েম করা ব্যতীত তেমনি বেহেশতে যাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ।’ অর্থাৎ মুসলমানরা নামাজ পড়েন আর অমুসলমানরা নামাজ পড়েন না। সে হিসেবে যারা নামাজ পড়ে না, তারা নিঃসন্দেহে কুফরিতে লিপ্ত। আর কাফেরের রোজা, জাকাত, হজ কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। মুমিনের জন্য প্রথম কাজ হলো নামাজির খাতায় নাম লেখানো। কাজেই নামাজ ছাড়া সব আমলই বৃথা_ এ ব্যাপারে কারও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
হাদিস শরিফে আছে, ‘এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করার জন্য দুই কোটি আটাশি লাখ বছর জাহান্নামে থাকতে হবে।’ আর রোজার বেলায় যারা সেহরি খেয়ে সময় হওয়ার পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলে, তাদের উদ্দেশে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি একসময় ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুইজন আগন্তুক এসে আমার হাত ধরে টেনে তুলে একটি উঁচু পর্বতের কাছে নিয়ে বলল, উপরে উঠুন। আমি বললাম, আমি উঠতে পারি না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। এর পর আমি পর্বতের চূড়ায় উঠলাম। সেখানে আমি আর্ত-চিৎকার শুনতে পেলাম। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা হলো জাহান্নামবাসীদের আর্তনাদ। আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমি দেখলাম, কিছু মানুষকে পায়ে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, আর তাদের মুখের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ওরা কারা? তারা বলল, এরা হলো তারাই, যারা রোজা রেখে সময় হওয়ার পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলত।’
তাহলে একবার চিন্তা করুন, সারাদিন রোজা রেখেও শুধু একটু গুরুত্ব না দেওয়াতেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে যারা মোটেও রোজা রাখে না, তাদের অবস্থা কী হবে? আর যারা নামাজ ছাড়া শুধু রোজা রাখে, তাদের অবস্থাই বা কী হবে? মোটকথা হলো, নামাজ ছাড়া কোনো প্রকার ইবাদতেই কোনো কাজ হবে না; যদিও সেটা যত ভালো ইবাদতই হোক। তাই মাহে রমজানের পরিপূর্ণ সওয়াব পেতে হলে রোজা পালনের পাশাপাশি অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।