অ্যালবাম থেকে নেওয়া-
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
"জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?"- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা এই কবিতার লাইন গুলো যখন বইয়ে পড়েছি,তখন তার সারমর্ম বুঝিনি। তখন এগুলি শুধুই কবিতার লাইন ছিলো, কিন্তু জীবনের একটা একটা দিন যখন কাটছে, এই লাইনের আসল মানে গুলোও একটু একটু করে বুঝতে পারছি।
আসলে এই পৃথিবীতে প্রতিটি দিন- রাত্রির সাথে সাথে আমরাও এগিয়ে চলি মৃত্যুর দিকে। অনেকে বলেন ভগবান আমাদের জন্মের সাথে সাথে মৃত্যুও লিখে দেন, আবার অনেকে বলেন আমাদের গত জন্মের কর্মফল ঠিক করে আমাদের বর্তমান জন্ম ও মৃত্যু কিভাবে হবে, আবার অনেকে বলে গত জন্ম বলে কিছুই নেই, এই জন্মের কর্মফল এই জন্মেই ভোগ করতে হয়।
আসলে এর মধ্যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল আমি জানিনা, আমি শুধু মানি ভগবান আর ভাগ্য। আমার জীবন ভগবানের সৃষ্টি, তিনি ভাগ্যে যা লিখেছেন, সেটা ঘটবেই। আমরা শুধু শুধু একে অপরকে দোষ দেই। তবে আমার সত্যিই মাঝে মাঝে রাগ হয়, ভগবান এমন এমন মানুষদের নিজের কাছে ডেকে নেন যাদেরকে আমাদের জীবনে ভীষণ প্রয়োজন আর এমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন যাদের এই পৃথিবীতে বেচেঁ থাকাটাই কষ্টের। সবাই বলে এটাই নিয়তি, ভগবান এমনই লিখেছেন কপালে।
আমি জানি আমাদের নিয়মে পৃথিবী চলে না, সে চলে তার আপন নিয়মে। আমাদের কষ্ট যে দেয় সহ্য শক্তিও সেই দেয়। নাহলে যে মায়ের জন্য পৃথিবী দেখা তাকে ছেড়েও যেমন আমরা বাঁচি, তেমনি ১০মাস গর্ভে ধারণ করে, নিজের শরীরে একটু একটু করে বড় করে যাকে পৃথিবীর আলো দেখায় সেই সন্তানকে ছেড়েও মায়েরা বাঁচে।
সত্যিই পৃথিবী বড়ো সুন্দর, এই পৃথিবীতে কত কষ্ট আছে, কত দুঃখ আছে তবু এই পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায়না, আর মানব জীবন তো আর ও সুন্দর। তাই পরজন্মে জেনো আবার মানুষ হয়ে জন্ম নিতে পারি আমরা সবাই সেই প্রার্থনা করি।
এতগুলো কথা বললাম কারণ আজ মায়ের গলা শুনতে বড্ড ইচ্ছে করছে,মনে হচ্ছে সেই ছোটোবেলার মতো করে মা আমাকে একবার ডাকুক। যে ডাক শুনলে যেখানেই থাকিনা কেনো এক ছুট্টে বাড়ি ফিরে আসতাম।ঝুনুদির মায়ের মৃত্যু আমাকে যেনো আর ও একবার মা হারানোর কষ্টের অনুভূতি বাড়িয়ে দিলো। আমার এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে যে ওই বাড়ির প্রতিটা কোণে এখন ঝুনুদি ওর মাকে খুঁজে পাবে, যেটা ওর কষ্ট আর ও বাড়াবে। আমার মায়ের মৃত্যু প্রায় ১০বছর হয়ে গেলো, এখনো বাড়ি গেলে ছটফট করি,২-৩দিন থাকতে কষ্ট হয় আর,ঝুনুদি ওর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ওখানেই থাকবে।
এই পৃথিবীতে কারোর জন্যই কিছু থেমে থাকে না, দিন রাত যেমন হয়, তেমনি মানুষও বেচেঁ থাকে, হ্যাঁ কষ্টে থাকে, দুঃখে থাকে কিন্তু বেচেঁ থাকে। ভগবান সেই শক্তি দিয়েই দেন। কিন্তু ভগবান যদি সবই পারেন তাহলে কেনো মায়েদের তিনি ডেকে নেন, মায়ের অভাব যে কেউ পূরণ করতে পারেনা, এটা তো তার অজানা নয়। বয়েস হলে মৃত্যু হবে এটা মেনে নেওয়া যদিও সম্ভব কিন্তু সময়ের আগে চলে গেলে সেই কষ্ট বড্ড বেশী।
তবুও এটা মেনে নিয়েই দিন কাটছে, কাটবেও জানি, শুধু শক্তি দিও ঠাকুর।ঝুনুদিকে, আমাকে, আমাদের মত যাঁরা তাদের মা কে হারিয়েছে তাদের সকলকে তুমি শক্তি দিও, সামলে রেখো। আর আমাদের মায়েদের তুমি ভালো রেখো, শান্তিতে রেখো।
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।নিজেদের মায়েদের,সন্তানদের সকলের সাথে থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আপনদের সকলের দিন ভালো কাটুক।