“মা” অতি ছোট এক অক্ষরের একটি শব্দ। অথচ এ শব্দটির গভীরতা সীমাহীন। পৃথিবীর সমস্ত দামী শব্দের চেয়েও দামী একটা শব্দ মা। অবশ্য এ শব্দটির অর্থ বা মূল্য ব্যক্তি ভেদে একেক জনের কাছে একেক রকম। যে মাকে শুধুমাত্র মা বলেই মনে করে । অর্থাৎ মা শুধুই মা। আমাদের জন্ম দাত্রী। আমাদের কোলে পিঠে করে বড় করবেন,এক সময় বুড়ো হয়ে মরে যাবেন, কর্তব্যবোধ থেকে সন্তানদের লালন-পালন করেন, আদর করেন ভালোবাসতে হয় তাই ভালোবাসেন, সন্তানের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই তিনি তা করেন- যাদের চিন্তা ভাবনা এরকম তার কাছে মা শব্দটি ব্যাখ্যা এক রকম আবার আমাদের প্রতি মায়ের অবদান আত্বত্যাগ, আমাদের বড় হওয়ার পেছনে তার অক্লান্ত পরিশ্রম, রাত জাগা, আমাদের অসুখ-বিসুখে তার উৎকন্ঠা, আমাদের ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য তার ব্যস্ততা । আমাদের সুখে-দুঃখে তার হাসি কান্নার অনুভূতি, বিশেষ করে পরকালে আমাদের বেহেশ্ত দোজখের ফয়সালার ব্যাপারে মায়ের ভূমিকাকে যারা মূল্যায়ন করে তাদের কাছে “মা”শব্দটির ব্যাখ্যা আরেক রকম।
“আমার মা” লেখাটি আমার মা মানে আমার নিজের মাকে নিয়েই আমার এ লেখা।
image source
খুব সম্ভবত ১৯৮০ অথবা ১৯৮১ সাল হবে। আমার বয়স তখন ৪ অথবা ৫ বছর হবে। আমার প্রান প্রিয় বাবা আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য দুনিয়া ছেড়ে পরপারে চলে যান তার আপন স্থায়ী ঠিকানায়।
সংসারে আমরা ৬ ভাই-বোন। আমার বাবা কৃষি কাজ করতেন। কৃষিই ছিল আমার বাবার একমাত্র পেশা। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার বড় ভাই সংসারের হাল ধরেন কৃষি পেশার মাধ্যমে।
আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা অনেক কষ্ট করেছেন, এখন করছেন। বোনদের বিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে আমাদের পড়াশোনা করানো একমাত্র তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। মা না থাকলে আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের পড়াশোনা একেবারেই হতো না।
কারন আমার সংসারের কর্তা আমার বড় ভাই আমাদের পড়াশোনার কোন দায়িত্বই কখনো নেননি।আমার ভাই চেয়েছেন আমরা তার সাথে জমিতে কাজ করি। করেছিও তাই কিন্তু মায়ের বুদ্ধিতে ও প্রচেষ্টায় পড়াশোনাটাও চালিয়ে নিয়েছি। পড়াশোনা করেছি ঠিকই কিন্তু নিজেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারিনি। এখনও নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। মাকে তার কষ্ঠের প্রতিদান দিতে পারিনি। তার যথাযথ সেবা যত্ন করতে পারিনি। তার এখন ৬৫ থেকে ৭০ বছর বয়স অথচ তার রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়াসহ যাবতীয় কাজ তাকেই করতে হয়।তিনি বড় একটি ঘরে একাই থাকেন, অসুখে-বিসুখে তাকে সংগ দেওয়ার মত কেউ নেই। তার জীবন যুদ্ধের সাথী তিনি একাই। তার সেবা যত্ন করার সময় কারো হয় না। সবাই ব্যস্ত খুব ব্যস্ত। মা শহরে থাকতে পারেন না। তাই বাড়ীতে থাকেন। তার সেবা করার জন্য কেউ বাড়ী থাকতে রাজি না। তিনি এখন গুরুত্বহীন একজন মানুষ।
আমার মা আমাদের নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন অথচ বিনিময়ে তাকে ভালো কোন প্রতিদান দিতে পারিনি।
IMAGE SOURCE
কখনো তার সাথে সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে তিনি কখনো আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। সুখে-দুঃখে বিপদে -আপদে সব সময় পাশে থেকেছেন।
অথচ সেই মাকে একা বাড়ীতে ফেলে আমরা আরামছে ঢাকায় আছি। তাকে নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। আমাদের মাথা ব্যথা শুধু আমাদের নিয়েই। আমাদের ছেলে মেয়ে সংসার নিয়ে। আমওি যে বুড়ো হয়ে গেছি আমার পরিণতি কথা যে আমার ভাবতে হবে তা ভুলেই গেছি।
image source
মায়ের কোন ছেলের বউয়ের তাকে নিয়ে ভাববার সময় হয় না । তারা যার যার সুখের ভাবনায় ব্যস্ত।
মা যখন তার কষ্ঠের কথা বলেন তখন মুখ বন্ধ করে শোনা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।
জানিনা কবে তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে যান সেদিন হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।