Ashaa Othoba Nirashaa: [আমার আশা-নিরাশার নিশা]

"আঙ্কেল! আঙ্কেল! ওই পুতুল..."
দোকানির সাথে দাম কষাকষির এক পর্যায়ে হঠাৎ একটু ডানে ঘুরে দেখি হাটুর কাছে পাঞ্জাবির কোণায় একটি ছোট্ট কোমল হাত। ছোট্ট একটা বাচ্চা আমার পাঞ্জাবির কোণা ধরে টেনে কি যেনো বলতে চাইছে।
হাটু গেড়ে বসে বাবুটার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কি লাগবে তোমার বাবু? তোমার আব্বু আম্মু কোথায়?"
হঠাৎ করেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো!
আমি কি ভুল দেখছি?!
আমার অতিপরিচিত একজোড়া চোখ!
নাহ্, ভুল তো দেখছি না। সেই একই চোখ, একই চাহনি।
কোথায় যেনো হারিয়ে যেতে যেতে আবার একটি অতিপরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে এলো।
"শুভ্র! শুভ্র!..."

এইবার নির্ঘাত আমার হৃদপিণ্ডটা বুক ফেটে বের হয়ে যাবার মতো করে বীট দিতে লাগলো।
চোখের সামনে একজোড়া সেই চোখ, আবার কানে এলো ঠিক সেই কন্ঠস্বর।
এক মুহূর্তের জন্য আমি এইবার সত্যিই হারিয়ে গেলাম আজ থেকে ঠিক ৪ বছর আগে।

.....আমার ছোট আপার জন্মদিন। মেঝো আপা কেক নিয়ে এসেছে। ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে জন্মদিন পালনটা আমাদের পরিবারের একটি অলিখিত নিয়ম। সবার মধ্যেই এক অন্য রকম আনন্দ। আমাকে আপা ডাক দিলো ড্রইংরুমে যাওয়ার জন্য, ঠিক এমন সময় নিশার মেসেজ, "আব্বু সব জেনে গেছে, আমাকে অনেক বকাঝকা করছে সবাই, আমি অনেক কান্না করছি, আমার কথা কেউ মানছে না সবুজ। আমি এখন কি করবো?"
বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো, মনে হলো এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাবে।
"হায় আল্লাহ! এখন উপায়? কিভাবে জানলো? প্লিজ তুমি কান্না করোনা। আমি দেখছি কি করা যায়। প্লিজ, একদম কান্না করবা না।" এই মেসেজ দিয়ে আমি কোনো রকম উঠে ড্রইংরুমে চলে গেলাম আপুর কেক কাটায় অংশ নিতে। কেক কাটা, সেল্ফি তোলা সবই হলো, কিন্তু আমার মনের ভেতরে তখন এক ভায়ানক ঝড় চলছে, যেই ঝড়ের শঙ্কা করে যাচ্ছিলাম গত ছয়টি বছর ধরে।
তাহলে কি এবার সব শেষ??!!
আমার মাথা কাজ করছিলো না, কোনো রকম আপুদের সময় দিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হলাম, স্কুলের মাঠের এক কোণায় গিয়ে নিশাকে মেসেজ করলাম।
নিশা কল করলো। আমি শুধু ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। বোবার মতো নিথর হয়ে গেলাম, কোনোভাবেই নিশার কান্না থামাতে পারছি না।
গত ছয়টি বছর ধরে যে চোঁখের মায়ায় আমি মোহিত হয়ে আছি, যে চোখে এক ফোটা অশ্রু দেখলে আমার পুরো দুনিয়া একাকার করে দিতে ইচ্ছে করে, সেই চোখে আজ অঝোর ধারা বইছে।
খুব শক্ত মনের মানুষ হওয়ার পরেও আমি আর টিকতে পারলাম না, অঝোরে কাঁদছি দুজন।
কেনো কাদছি?!
কারন আজ নিশার বাসায় আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে গেছে। জানার পরে কি হতে পারে তা আমরা আগেই বুঝতাম, তাই টানা ছয় বছর আমরা আমাদের সম্পর্কটা এমনভাবে চালিয়েছি যেনো কোনোভাবেই নিশার পরিবার জানতে না পারে।
উদ্দেশ্য ছিলো আমি পড়াশুনা শেষ করে একটা ভালো জব পাওয়ার পরেই নিশার পরিবারে প্রস্তাব পাঠাবো।
এছাড়া নিশার পরিবার আমাকে কোনোদিন মানবে না।
আজ আমাদের ছয় বছরের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ার পথে।
হয়তো হারিয়ে ফেললাম জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষটিকে!
ছয়টি বছর ধরে যত্ন করে আগলে রাখা ভালোবাসা বুঝি আজ সত্যি হারিয়ে যাচ্ছে।
ভয়ে হাত-পাঁ অবশ হয়ে যাচ্ছিলো।

এরপর টানা ৬ মাস অনেক চেষ্টার পরেও নিশার পরিবারকে মানাতে ব্যার্থ হই আমরা।
নিশার পরিবার নিশাকে মানিসিকভাবে এমন বিপর্যস্ত করে তুলেছিলো যে একসময় নিশা বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিলো।
তার পরিবারকে কষ্ট দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না, শেষমেষ এই বলে আমার সেই চেনা চোখদুটো, সেই চেনা কন্ঠস্বর, সেই চির আরাধ্য ভালোবাসার মানুষটি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো।
এরপরও অনেক ভাবে অনেক চেষ্টা করেও আর ফেরাতে পারিনি নিশাকে। আমাকে নিরাশার সাগরে ভাসিয়ে হারিয়ে গেলো আমার নিশা!!

.....আজ আবার সেই চেনা কন্ঠস্বর, এই ছোট বাবুটার মাঝে সেই চেনা চোখ দুটো দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।
কিছু বুঝে উঠার আগেই একটি মেয়ে দ্রুত ছুটে এসে বাবুটাকে কোলে তুলে নিয়ে বলতে লাগলো,
"এই শুভ্র, তোমাকে না বলেছি মার্কেটে একদম ছুটোছুটি করবে না। যদি হারিয়ে যেতে??!!"
কাঁদো কাঁদো গলায় মেয়েটা এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো।

"কেমন আছো, নিশা?"
প্রশ্নটা শুনে মাথা উঠাতেই নিশার চোখদুটো স্থির হয়ে গেলো আমার চোখে।
যেনো পৃথিবীর সকল ভাষা আজ হারিয়ে ফেলেছে নিশা।
চোখ দিয়েই হয়তো অনেক কিছু বলে ফেলতে চেয়েছিলো, ঠোটজোড়া শুধু কাপছিলো অনবরত।
আমি নিজেও এরপর কি বলবো তা বুঝে উঠার আগেই নিশা বলে বসলো, "ভালো আছো?"
"ভালো আছি। এই বাবুটা কে????"
"ওর নাম শুভ্র, আমার ছেলে।"

এখন বুঝলাম, কেনো এই চোখে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম এক পলক দেখেই।

বেশী কথা বলতে পারছিলাম না কেউই।
কন্ঠ জড়িয়ে আসছিলো দুইজনেরই।

এই অজস্র ভীরের শপিংমলে দুইটি মানুষ খুব অল্প কথার আড়ালে আরেকবার হয়তো মনের মধ্যে অঝোরে বৃষ্টি ঝড়িয়ে নিলো, যা রয়ে গেলো সকলের অগোচরেই।
ঠিক যেমনটা তাদের ছয় বছরের অজস্র স্বপ্নে বোনা ভালোবাসাটা হারিয়ে গিয়েছিলো আজ থেকে চার বছর আগেই।
কোনো রকম ফরমাল কথা শেষ করে, "আচ্ছা, ভালো থেকো" বলে বিদায় নিলাম দুজন।

বাইরে বেরিয়ে খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, আকাশের এতো বিশালতাও আকাশকে কখনো অন্য কারো সঙ্গ পেতে দেয়নি।
আমিও নাহয় আকাশ হয়েই বেচেঁ রবো। নিজের বিশালতায় নিঃসঙ্গতার নিরাশা ঘুচাবো।

IMG_20200702_053619.jpg

ধন্যবাদ

#BDCommunity কে এতো সুন্দর একটি কন্টেস্টের আয়োজন করার জন্য।

কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center