জামান(ছদ্ধনাম)। আমার মামা, বন্ধু, ক্লাশমেট, প্রতিবেশী যেভাবেই বলি-অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ যার তুলনা সে নিজেই। তার সাথে অন্য কারো তুলনা চলে না, তার সাথে তুলনা করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যায় না, পাওয়ার মত না। আচার-আচরনে, কথা বার্তায় এক অসাধারন ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ। আমার চোখে তাকে কোন পাপ কাজ করতে দেখিনি। আমি এবং জামান প্রাইমারী স্কুলে একই ক্লাশে লেথাপড়া করতাম সেই প্রথম শ্রেনী থেকে তার সাথে আমার তুমুল প্রতিযোগিতা চলত। এ বছর ও প্রথম তো আগামী বছর আমি প্রথম। এভাবেই তার আর আমার প্রতিযোগিতা চলত। এভাবেই প্রাইমারী শেষ করে হাই স্কুলে পদার্পন করলাম।
যথারীতি প্রতিযোগিতা চলতেই থাকল। হাই স্কুল শেষ করে আমরা একই কলেজে ভর্তি হলাম। আমি কলা বিভাগে আর জামান ভর্তি হল বানিজ্য বিভাগে। ১৯৯৬ সালে অভিন্ন প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা হল। মাত্র ২৪% শিক্ষার্থী পাশ করল। পাশ করাদের মধ্যে আমার জায়গা হয়েছিল।
আর জামান ইংরেজিতে খারাপ করল। তখন থেকে আমরা বিছিন্নি হয়ে গেলাম।জামান গ্রামে থেকে গেল আর আমি শহরে চলে এলাম।মামা ভাগিনার প্রতিযোগিতার পর্ব শেষ হল বিচ্ছেদের মাধ্যমে।অত্যন্ত সহজ সরল একজন খুব ভালো মানুষের সংগ হারালাম। যথারীতি আমরা দুজনেই পড়াশোনা চালিয়ে গেলাম। জামান বি কম পাশ করে আমাদের এলাকায় একটা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে আর আমি ঢাকায় একটা প্রাভেট কোম্পানীতে চাকরি করি।জামান আমার এক অথবা দেড় বছর পর বিয়ে করে।
image source
আমার দেখা ভালো মানুষটার দাম্পত্য জীবনের পথচলা শুরু হয়। এখানে বলে রাখা ভালো জামান একজন নামাজী সচ্চরিত্রবান ও অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ কিন্তু স্ত্রী উচ্চাভিলাসী । নামাজ-কালাম ও সততার ধার ধারেন না। টাকা-পয়সা,ভোগ-বিলাস ও চিত্তবিনোদনই ছিল তার নেশা। এভাবে যেতে যেতে দুজনের দুরকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর মাঝে তাদের একটা কন্যা সন্তান হয়। আর মন মানসিকতায় মেজাজ মগজে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হতে থাকে। স্বভাবতই স্বামী নামাজী হলে স্ত্রীকে নামাজের কথা বলবেই এটাই স্বভাবিক।
জামান একজন প্রচন্ড ধর্ম ভীরু লোক। আর তার ধর্ম ভীরুতার কারনেই সে গান বাজনা, নাটক সিনেমা পছন্দ করত না। জামানের ঘরে চিত্তবিনোদনের কোন উপকরন না থাকাতে তার স্ত্রী অন্যের ঘরে টিভি দেখতে যেত যা জামানের একবারেই অপছন্দনীয় ছিল। এ নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হত যা পরে ঝগড়া-ফ্যাসাদে রূপ নেয় এবং তার মাত্রা সীম ছাড়িয়ে যায়।
এ নিয়ে দুজনের মধ্যে সব সময় দন্দ্ব লেগেই থাকত।
image source
এভাবে করে করে প্রায়ই তার স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ী চলে যেত। বুঝিয়ে-সুজিয়ে মাঝে মাঝে বাড়ীতে নিয়ে আসত আবার চলে যেত। জামান চেয়েছিল সংসারটা টিকিয়ে রাখতে কন্তিু তার স্ত্রীর ভোগ বিলাসী মানসিতার কারনে সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। যার পরিনতিতে অবশেষে ছাড়াছাড়ির মাধ্যমে তার ৮ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটে। এখন তার বয়স ৪৬ বছর । তার জীবন এখন একাকীত্বে কাটে। চোখের জলে বুক ভাসে।সংসারে এখন তার বৃদ্ধা মা আর সে।
image source
এই বয়সে এসে সে বড় একা শুধুই একা । তার একটা মেয়ে আছে তার মেয়েকেও তার স্ত্রী নিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বাবার কাছে আসে আবার চলে যায়। বাবা মেয়ের পরিনতির কথা ভেবে মেয়ের অগোচরে কাঁদে। তার জন্য খুবই কষ্ট হয়। আমার কাছে মনে হয় ভালো মানুষ গুলোকে আল্লাহ কষ্ট সহ্য করার জন্যই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। হয়তো বা আখেরাতে তাদের জন্য ভারো কিছু রেখেছেন। এভাবেই চলছে জামানের একাকী জীবন।