ভাইগ্না যাবি নাকি?
কই যাবেন মামা ?
-কলেজ এভিনিউ, কত দিবো?
-২০ টাকা দিয়েন মামা।
পাশের অন্যান্য ইঞ্জিনচালিত রিকশা, বা সামর্থ্যবান ব্যাক্তিরা কেউই ৩০ টাকার নিচে যাবেনা। (যদিও ন্যায্য ভাড়া ২০ টাকাই)
তাই উঠে পড়লাম।
উঠতে না উঠতেই হঠাৎ খারাপ লাগল,
একে তো রিক্সা টাও ভালো ছিলনা, আর ও টেনে আগাতে হিমসীম খাচ্ছিলো।
ইচ্ছা হচ্ছিলো রিক্সা দিয়ে নেমে যাই, কিন্তু সারাদিনের বাইরের ঝামেলা নানা ক্লান্তি নিয়ে আমারো নামার মতো অবস্থা ছিলনা সত্যিই।
যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাইগ্না তুই তো চালাতে পারছিস না, এভাবে কি তুই যেতে পারবি?
- পারমু মামা, আমার তো চালাইতেই হবে।
(আমার আবেগ টা যতটা সত্যি ততটাই সত্যি ছিলো ওর বাস্তবতা)
এরপর,
জিজ্ঞেস করলাম - বাসায় কে কে আছে?,
বলল- মা, আমি, ছোডো বুইন।
তোর বাবা কই?
-বলল বাবা মারা গেছে।
তোর মা কাজ করেন না কোনো?
( এবার বাস্তবতা আরো নিষ্ঠুর )
-মামা, মা অসুস্থ্য!
কেন, কি সমস্যা?
-মামা, মায়ের কিডনি নস্ট, বরিশালের ডাক্তার ঢাকা নিতে কইছিলো, ঢাকার ডাক্তার রা কইছে তোমার মা বাঁচবেনা।
এর থেকে আর কিছু নির্মম হতে পারেনা যে, মায়ের বাঁচার সম্ভবনা নেই তা সন্তান জানে।
বললাম, রিক্সাটাও তো ভাঙা, একটা ইঞ্জিন এর রিক্সা নিতি। - মামা ওইগুলার জমা বেশি, মায়ের ঔষধ কেনা লাগে, টাকায় হয়না।
শুনছিলাম মানুষের জীবনে হতাশা কি হতে পারে, তার জীবনে কষ্টের রেল লাইনের গতি কতটা দ্রুত হতে পারে!
জীবন সংগ্রামে ছোট্ট এই ছেলেটা প্রতিনিয়ত হেরে গিয়েও একবার ও হাল ছেড়ে দিচ্ছেনা!
না সে আমাদের মত এত শিক্ষিত নয়, হ্যাঁ সে অশিক্ষিত, কিন্তু তার বিবেক আমাদের শিক্ষিত সমাজের থেকে অনেক এগিয়ে।
যখন দিনে দিনে বৃদ্ধাশ্রম গুলো বেড়ে চলছে তখন মা এর প্রতি এই ভালোবাসা আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
যে ছেলেটা জানে তার মা বাঁচবেনা সে তবুও প্রতিদিন ৫০০ টাকার ঔষধ কেনা চেষ্টা করছে এই আশায় হয়ত মা বেঁচে যাবেন।
কষ্টে চোখে জল এসে যাচ্ছিলো ওর জীবনের গল্প শুনে।
নামার আগে আগে বলল,
মামা আপনারে একটা কথা কই, আমার বাপ মরেনাই।
আমি একটু চমকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তুই যে বললি...?
মামা আমার বাপে মায়ের রোগ শুইনা মায়রে ছাইড়া গেছে, আরেকটা বিয়া করছে।
তাই সবারে কই, বাপ মইরা গেছে।
আমি বললাম, খুব ভালো বলেছিস, আর ওটাই বলে যাস আজীবন।
আমার পকেটে ঠিক ৬০/- ছিলো, আমি ওটা দিয়ে দিলাম,
আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য ইমরান প্রতিনিয়ত ঘোরে ফেরে।