বাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনায় আমের চাষের পদ্ধতি।

আম আমাদের সুপরিচিত ও অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু একটি ফল। একে আমরা ফলের রাজা ও বলে থাকি। প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই কম বেশি আমগাছ দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত এটি আকারে অনেক বড় হয়। কিন্তু বর্তমানে বাড়ির ছাদ কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় খুব সহজেই আম চাষ করা যাচ্ছে। আসুন জেনে নিই কিভাবে এই মধুর ফলটির চাষ করবঃ
Screenshot_2018-10-21-05-55-21-1.png
Image source

আম চাষের জন্য কেমন আকারের টব নির্বাচন করা উত্তমঃ
বাড়ির ছাদে আম চাষ করার জন্য মাঝারি আকারের টব ব্যাবহার করাই উত্তম। এছাড়া হাফ ড্রাম ও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
Screenshot_2018-10-21-06-00-52-1.png
Image source

টব বা মাটি তৈরীকরণঃ
আম চাষ করতে গেলে প্রথমে মাটি তৈরী করতে হবে। এটা অনেকটা জমি নির্বাচনের মত। যদি টবে আম চাষ করতে চান তাহলে টবের জন্য মাটি তৈরী করে নিতে হবে। টবে আম চাষের জন্য উর্বর দোআশ মাটি সর্বোত্তম। টবের মাটির সাথে গোবর, টিএসপি ও কম্পোস্ট সার মেশাতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার তৈরী হয়। পানি নিষ্কানের জন্য টব বা ড্রামের নিচের দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিদ্র করে দিতে হবে।

আমের জাত নির্বাচনঃ
আমরা আমের চাষ করে থাকি লাভ পাওয়ার জন্য। আম চাষ থেকে লাভ পেতে হলে আমাদের একটি ভাল জাত নির্বাচন করতে যেন ফলন ভাল হয়। আমাদের দেশে নানা জাতের আম রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু উন্নত জাত হলঃ আম্রপালি, দশেরী, চৌষা, শ্রাবণী ইত্যাদি। এদের মধ্যে আম্রপলি চাষ করা বেশ লাভজনক। এটি আকারে অনেক বড় হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। এই জাতের আমকে ঘরেও বেশ কয়েকদিন রেখে দেওয়া যায়। তাছাড়া এর ফলনও অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি হয়। তাছাড়া থাইল্যান্ড থেকে আসা 'ডক মাই' জাতটিও চাষ করতে পারেন।

আমের চারা রোপনের উত্তম সময়ঃ
আমের চারা যখন তখন না লাগিয়ে উপযুক্ত সময়ে লাগালে সবচেয়ে ভাল হয়। আমের চারা রোপনের জন্য জৈষ্ঠ্য - আষাড় মাস সর্বোত্তম। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণের বৃষ্টি হয় তাই চারা পর্যাপ্ত খাবার পায় ও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও আম্রপলি চারা লাগানো যেতে পারে। এটিও একটি উপযুক্ত সময়। যদি পানি সেচের জন্য যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা থাকে তাহলে সরা বছরই আমের চারা রোপন করা যেতে পারে।

কীভাবে আমের বীজ বপন করবেন ও সঠিক পদ্ধতিতে পানি সেচ দিবেনঃ
আমের চারা সোজা করে লাগাতে হবে। চারা রোপনের পর গাছের গোড়ার মাটি হাত দিয়ে টিপে টিপে কিছুটা উচু করে দিতে হবে যেন পানি গাছের গোড়া দিয়ে না ঢুকে একটু দূর দিয়ে ঢুকে। চারা লাগানোর পর চারাটিকে একটি সোজা কাঠির সাথে সোজা করে বেধে দিতে হবে। চারা লাগানোর প্রথম দিকে পানি কম পরিমাণে সেচ দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে পানি সেঁচের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমের চারা দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হয় এবং পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যাবস্থা আছে এমন স্থানে রোপন করতে হয়।

আমের চারা রোপনের সঠিক পদ্ধতি বা কৌশলঃ
বাড়ির ছাদের টবে অথবা ড্রামে আমের চারার কলম লাগানোর পর সেচ দিবেন। নিয়মিত সেচ দিতে হবে। কলমের চারা যদি লম্বা হয় তখন ডালাপালা মাটিতে লেগে যায় সেক্ষেত্রে ডালপালার আগা কেটে দিতে হবে। টব বা ড্রাম ছাদ থেকে কিছুটা উপরে রাখতে হবে তাহলে ছাদের কোন ক্ষতি হবেনা। টব বা ড্রামের চার কোণায় চারটি ইট ব্যাবহার করে উচু করে দেওয়া যেতে পারে বা অন্যান্য পদ্ধতিও অবলম্বন করা যেতে পারে।

আম গাছের পরিচর্যাঃ
আমগাছে বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড়ে আক্রমন করে ফসল নষ্ট করে। বিশেষ করে যখন গাছে মুকুল ধরে তখন পোকা আক্রমণ করে যার কারণে আম কুড়ি অবস্থায় ঝরে যায়। আবার যখন আম কিছুটা বড় হয় তখন আমের ভিতরেও পোকা হয়ে থেকে যার ফলে ফলন খুব একটা ভাল হয়না। এসব সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী কৃষি হাসপাতাল থেকে পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক ব্যাবহার করা উচিত।

আম সংগ্রহঃ
আম হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। আমাদের দেশে বৈশাখ শেষের দিকে ও জৈষ্ঠ মাসের প্রথমের দিকে আম সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। আম সংগ্রহ করার সময় দু-তিনটি পাতাসহ বোটা কেটে আম সংগ্রহ করবেন। তাহলে আমের গুণগত মান ভাল থাকবে। বোটার নিচে অথবা আমের উপরিভাগ কিছুটা হলদে ভাব ধারণ করবে যাকে আমরা আধাপাকা বলে থাকি তখনই আম সংগ্রহ করতে হবে।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Logo
Center